নারী, এই শব্দটি আমাদের সমাজে বহু অর্থ বহন করে—কখনো সে কামনার প্রতীক, কখনো ত্যাগের প্রতিরূপ। কিন্তু নারীর প্রকৃত সত্তা, যা মাতৃত্ব, সৃষ্টিশীলতা, এবং শক্তির ধারক, তা প্রায়শই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আড়ালে ঢাকা পড়ে। এই প্রথাগত ভাবনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন চিত্রশিল্পী জাহেদ রবিন। তার শিল্পকর্ম নারীর প্রতি পুরুষের কামনাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং মাতৃত্ব ও নারীর ভেতরের শক্তিকে উদযাপন করে।
নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে রবিনের ভূমিকা
রবিনের চিত্রকর্ম নারীর শরীরকে ভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে জীবনের ধারক ও সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে। তার আঁকায় নারী কেবল একটি দেহ নয়, বরং এক শক্তিশালী সত্তা, যার ভেতর দিয়ে জন্ম নেয় নতুন প্রাণ। তিনি তার শিল্পের মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সেই চোখকে পরিবর্তনের আহ্বান জানান, যা নারীর প্রতি শুধুমাত্র যৌন আকর্ষণের দৃষ্টিতে তাকায়।
রবিনের চিত্রকর্মে মাতৃত্ব একটি কেন্দ্রীয় বিষয়। তার তুলির প্রতিটি আঘাতে ফুটে ওঠে নারীর মমতা, তার ত্যাগ, এবং তার ভেতরের শক্তি। তিনি দেখান, যোনিপথ কেবল যৌনতার কেন্দ্র নয়, বরং তা জীবনের প্রবাহ, মাতৃত্বের স্নেহ, এবং সৃষ্টিশীলতার প্রতীক।
নারীমুক্তি ও সমাজের বৈষম্য
জাহেদ রবিনের কাজ সমাজে নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য এবং পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কঠোর সমালোচনা করে। তার চিত্রকর্মে নারীরা কখনো বঞ্চিত, কখনো প্রতিবাদী, আবার কখনো মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উদ্ভাসিত। তিনি তার ক্যানভাসে সমাজের সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেন, যেখানে নারীর স্বতন্ত্রতা বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
রবিনের একেকটি ছবি যেন সমাজের রক্ষণশীল কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তার চিত্রে দেখা যায়, নারীরা শৃঙ্খলমুক্ত হচ্ছে, মাতৃত্বের গৌরব নিয়ে দাঁড়াচ্ছে, এবং সমাজের সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে নিজেকে তুলে ধরছে।
প্রতিবাদী চিত্রকর্ম: নারীর কণ্ঠস্বর
জাহেদ রবিনের শিল্প কেবল চিত্রকর্ম নয়, এটি নারীদের কণ্ঠস্বর। তিনি রং এবং রেখার মাধ্যমে নারীর মুক্তি এবং সামাজিক সমতার আহ্বান জানান। তার আঁকা ছবিগুলো নারীর সংগ্রাম, যন্ত্রণা, এবং তার জয়ের গল্প বলে।
রবিন তার চিত্রকর্মে নারীর অন্তর্নিহিত শক্তি ও মাতৃত্বের মহিমাকে উদযাপন করেন। কখনো একটি মা তার সন্তানকে বুকের সাথে জড়িয়ে আছেন, কখনো তিনি প্রসববেদনায় ক্লান্ত, আবার কখনো সন্তান জন্মের পর তার মুখে এক তৃপ্তির হাসি। এই প্রতিটি দৃশ্যই নারীর অভিজ্ঞতার গভীরতাকে তুলে ধরে।
রক্ষণশীল সমাজে রবিনের মতো শিল্পীর জন্ম রক্ষণশীল সমাজে জাহেদ রবিনের মতো শিল্পীর জন্ম একটি বিপ্লবের সমান। তিনি যেখানে সমাজ নারীর স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করে, সেখানে তার চিত্রকর্ম মুক্তির ভাষা হয়ে দাঁড়ায়। তার শিল্প পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে।
রবিন এমন একটি সমাজে শিল্পচর্চা করেন, যেখানে নারীর মাতৃত্ব এবং শক্তি প্রায়শই অবহেলিত। তার চিত্রকর্ম সেই অবহেলাকে চিহ্নিত করে এবং আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, নারীর সত্যিকার পরিচয় কেমন হওয়া উচিত।
রবিনের শিল্পের গভীর বার্তা
জাহেদ রবিনের প্রতিটি শিল্পকর্মই একটি বার্তা বহন করে। তার তুলির আঘাতে উঠে আসে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, মাতৃত্বের মহিমা, এবং সৃষ্টির শক্তি। তিনি তার চিত্রের মাধ্যমে বলেন, নারীর যোনিপথ কেবল যৌনতার নয়, এটি জীবনের স্রোতধারা, যা আমাদের অস্তিত্বকে সম্ভব করেছে।
উপসংহার
জাহেদ রবিনের শিল্পকর্ম নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে বাধ্য করে। তিনি আমাদের দেখান, নারী কেবল কামনার বস্তু নয়; তিনি সৃষ্টির উৎস, মাতৃত্বের প্রতীক, এবং জীবনের চিরন্তন ধারক। রক্ষণশীল সমাজে রবিনের মতো শিল্পী আমাদের চোখ খুলে দেন, আমাদের ভাবনার গভীরতাকে স্পর্শ করেন, এবং আমাদের সামনে নতুন এক পৃথিবীর সম্ভাবনা তুলে ধরেন—যেখানে নারী সত্যিকারের শ্রদ্ধা ও মর্যাদা পায়।