সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।। এই জমিদারবাড়ি কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ১৬ কিমি দূরে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নে অবস্থিত। শোনা যায় ইংরেজ আমলের শুরুর দিকে ভিতরবন্দ পরগণার সদর দপ্তর ছিল রাশাহীতে। তখন সেখানে জমিদারী সমাজ ব্যবস্থা ছিল। ভিতরবন্দ জমিদারীর শেষ জমিদার শ্রী ধীরেন্দ্র কান্ত রায় চৌধুরী।
মূল জমিদার বাড়িটি ছিল ১৫ একর ৪২ শতক জমির উপর ১৮ কোঠা বিশিষ্ট একটি পাকা দালান, একটি কাচারী বাড়ি, তিনটি মন্দির, তিনটি দিঘি ও বাগান। জমিদার ধীরেন্দ্র কান্ত রায় চৌধুরীর পিতা জমিদার সারদাকান্ত রায় ১৮ কোঠা দালানটি ১৮ শতকের গোড়ার দিকে নির্মাণ করেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের জন্য তিনটি মন্দিরও নিমার্ণ করেন। প্রজাদের সুপেয় পানির জন্য খনন করেন তিনটি দিঘি।
জমিদার ধীরেন্দ্র কান্ত রায় চৌধুরীর ১৮৯৯ সালে একটি কাচারীঘর নির্মাণ করেন। কাচারীঘরটি বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার হতো। এখানে নানা কাজ সম্পাদন করতেন জমিদার। নাটশালা হিসেবেও ব্যবহার হত এটি।
এই কাচারীঘরের পাশেই ১৮১৯ সালে নির্মিত হয় শ্রীশ্রী গোপালজিউ মন্দির।
পরবর্তীতে ১৯২২ সালে জমিদার ধীরেন্দ্র কান্ত রায় চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িসহ ৭ একর ১৮ শতক জমি স্ত্রী প্রতিভা বালা চৌধুরানীর নামে উইল করেন এবং ৮ একর ২৪ শতক জমি মন্দিরে দেবোত্তর সম্পতি হিসেবে দান করেন। ১৯২৪ সালে জমিদার পরলোকগমন করলে প্রভাতিবালা জমিদারী চালান।
১৯৪৯ সালে জমিদার প্রথার বিলুপ্ত হলে শুধুমাত্র বাড়ি এবং মন্দিরের জমি প্রতিভা বালার দখলে থাকে। ১৯৭৬ সালে প্রভাতিবালা সমস্তকিছু দেখভালের জন্য কর্মচারী মন্তোস কুমার চৌধুরীকে দ্বায়িত্ব দিয়ে তির্থ ভ্রমণে ভারতে যান। একমাত্র মেয়ে কনকবালার কলকাতার বাড়িতে তিনি কিছু বছর পর পরলোকগমন করেন। এদিকে দ্বায়িত্ব পাওয়া মন্তোস কুমার কিছু সম্পত্তি বিনষ্ট করে এবং স্থানীয়দের চাপে ১৯৮৪ সালে সপরিবারে ভারতে চলে যান। তার ভারতে যাওয়ার পরপরই ওই বছর জমিদারের বাড়ি বেদখল এবং লুটপাট হয়। ১৮ কোঠা দালানটি ভেঙেচুরে নিচিহ্ন করে একটি মহল। তবে ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায় কাচারীঘরটি।
পরবর্তিতে লাওয়ারিশ সম্পত্বি হিসেবে প্রতিভাবালার নামীয় জমি সরকার ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত করে দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। নিম্ন আদালতে সরকার পক্ষ রায় পায়। পরে দখলদার উচ্চ আদালতে আপিল করে। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। তবে দেবত্তোর মন্দিরের জমি কিছুটা বেহাত হলেও বেশিরভাগ রয়েছে মন্দিরের দখলেই। সরকার সেখানে একটি মন্দির পুননির্মাণ করেছে ২০১২ সালে। এদিকে জমিদার বাড়ির জমির কিছু অংশে ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মানাধীন রয়েছে এবং ইতিমধ্যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মান করা হয়েছে।
বর্তমান কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ১৮ শতকের শেষের দিকের ইটসুরকি, কাঠ দিয়ে নির্মিত চারচালা বারান্দাসহ টিনের আটচালা দ্বিতল ভবন জমিদারের কাচারীঘর টি। বর্তমানে ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
এবং ১৮১৯ সালে নির্মিত হয় শ্রীশ্রী গোপালজিউ মন্দির। যেখানে এখনও দৈনিক নিত্য পুজা হয়।
ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাচ্চু জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম নুতুন ভবনে নিয়ে যাওয়ার পর ২শ বছরের পুরাতন এই ভবনটি ঐতিহাসিক নিদের্শন হিসেবে রাখা হবে। এবং এই কাচারী ঘরটিতে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা আছে। যদি বরাদ্দ পায় তাহলে কাচারী ঘরটি মেরামত করে জমিদারের সকল স্মৃতি সেখানে সংরক্ষণ করা হবে।