কৃষকেরা এস এম সোহেল, গাইবান্ধা প্রতিনিধি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার কৃষকেরা তামাক চাষের নামে বিষের চাষে ঝুঁকছেন । বিকল্প লাভজনক ফসল না থাকায় অধিক মুনাফার আশায় নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জেনেও লাভের আশায় বিষবৃক্ষ তামাকের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। জানা যায়, উপজেলায় ধান ও ভুট্টার চাষ ব্যাপক হলেও ভুট্টার বাজার মূল্য নির্ধারণ না করা ও ভুট্টাজাত শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা না করায় লাভের আশায় তামাকেই ঝুঁকছেন চাষিরা। এছাড়াও তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় অফারেও বাড়ছে বিষবৃক্ষ তামাকের চাষাবাদ। ঋণ ও বিনামুল্যে বীজ, সার-কীটনাশনক সরবরাহসহ কোম্পানির কর্মীরা নিয়মিত চাষীদের মাঠ পরিদর্শন করে পরামর্শ দিচ্ছেন । তামাক উঠে এলে নির্ধারিত মূল্যে তামাক বিক্রয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তামাক কোম্পানি।তামাক কোম্পানির রয়েছে নিজস্ব চাষী। তারা চাষীদের জমি দেখে চাষি কার্ড দেন। তৈরী করেন চাষীদের ব্যাংক হিসাব নম্বর। তামাক পাতা বিক্রির সময় ঋণের টাকা কেটে নিয়ে চাষীদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নম্বরে চলে যায় তামাকের টাকা। ফলে বিক্রির নিশ্চয়তা পেয়ে তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা। তামাক চাষীরা জানান, তামাক চাষ করলে তামাক কোম্পানি বীজ সার কীটনাশক ও চাষাবাদ খরচ হিসেবে নগদ অর্থও ঋণ হিসেবে আগাম দিয়ে থাকেন। ফলে তামাক চাষে কম পুঁজি বিনিয়োগ করেই ফসল ঘরে তোলা যায়। তামাক বিক্রিতেও ঝামেলা নেই। কোম্পানি তাদের নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করেন। কার্ড দিলেই চাষিদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় হয়ে যায়। চাষিদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করতে বাধ্য কোম্পানী। তামাক চাষে খরচ বেশি হলেও অন্য ফসলের তুলনায় মুনাফা বেশি । পরিবারের সকল সদস্য মিলে তামাক ক্ষেতে পরিচর্যা করা যায়। বাড়ির শিশু থেকে বৃদ্ধ র্পযন্ত সকলেই তামাকের কাজ করতে পারেন । তামাক ক্ষেতে ও তামাক পাতা সংগ্রহের কারণে তামাক পাতার গন্ধে কিছুদিন বাড়িতে থাকা কিছুটা কষ্ট হয়। তামাকের কাজ করলে সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলেও লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছে পলাশবাড়ী উপজেলার চাষিরা। তামাকের পাতা সংগ্রহের সময় ঘর বাড়ী, উঠানসহ রাস্তার দুইধারেও শুকানো হয় তামাক পাতা। ফলে শিশু ও বৃদ্ধসহ পরিবারের অধুমপায়ীরাও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন। ভোগেন নানা ধরনের রোগে।তামাক ক্ষেতে কাজ করলে শরীরের নানা রোগ বাসা বাধে। এসব জেনেও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষ বাড়ছে। সরকারিভাবে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা মাঠে দেখা যায় না। উল্টো অন্য ফসলের প্রণোদনা এবং প্রর্দশনীও বরাদ্দও পাচ্ছেন তামাক চাষিরা। ফলে সরকারি বরাদ্দের সার ও অর্থে চাষাবাদ হচ্ছে তামাকের।যারা তামাক চাষ ছেড়ে অন্য ফসলে ধাবিত হচ্ছে তাদের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহ দিলে তামাক চাষ কমে আসবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। চাষিরা জানান, একই জমিতে দীর্ঘদিন তামাক চাষের ফলে তামাকের বড় বড় শিকড় জমির উর্বর শক্তি নষ্ট করে। ফলে তামাকের জমিতে অন্য ফসলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন একই জমিতে তামাক চাষ করায় এক সময় ওই জমিতে তামাকের ফলনও কমে আসে । নীলকর জমিদারদের মতই তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের সঙ্গে কৌশল প্রয়োগ করে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন । সরকারের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও তামাক কোম্পানির লোকজন নিয়মিত চাষিদের খোঁজ খবর নেন । পলাশবাড়ী উপজেলায় ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানি (বিটিসি) ক্রয় কেন্দ্রে এসব তামাক সরাসরি ক্রয় করা হয়। পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী, হোসেনপুর, বরিশাল, মহদীপুর ইউনিয়নে তামাক চাষ হয়। তবে কিশোরগাড়ী ইউনিয়নে ব্যাপক তামাক চাষাবাদ হয়ে থাকে । উক্ত ইউনিয়নের প্রায় গ্রামে তামাকের জমি দেখা যায়। এসব তামাক রাস্তার ধারে কিংবা বাড়ীর পার্শ্বে ওঠানে শুকাতে দেখা যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারঃ) সাইফুর নাহার সাথী বলেন,তামাক ছেড়ে ভুট্টা, পিঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি আলুসহ নানা জাতের সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্ত চাষিরা যেখানে মুনাফা বেশি পাচ্ছে সেসব ফসল চাষে ঝুঁকে পড়ছে। তবুও তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, কৃষি অফিসের সঙ্গে কথা বলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।