রাজনৈতিক প্রভাব, মালিকানা দ্বন্দ্বে বন্ধের মুখে ‘উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাস্ট্রিজ


পঞ্চগড় প্রতিনিধি পঞ্চগড় সদর উপজেলার কেচেরাপাড়া গ্রামে অবস্থিত একটি চা কারখানা দখলের অভিযোগ উঠেছে। উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের এই কারখানাটির দুই পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম মালিক পক্ষের একটি গ্রুপ এবং স্থানীয় কয়েকজন চা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, টি বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগকারীরা জানান, মালিকানা দ্বন্দ্ব ও দখলের ফলে চা কারখানাটি বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। এতে করে শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়বে। ২০১৮ সালে তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের ছায়া উদ্যোগে ৭ বিঘা জমির ওপর চা কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তিনি নিজের নামে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে রেজিস্ট্রেশন না করে তাঁর ঘনিষ্ঠজন কাজী এ এন এম আমিনুল হকের নামে ৬৫ শতাংশ শেয়ার রেখে রেজিস্ট্রেশন করেন। পাশাপাশি আব্দুর রাজ্জাক ৩০ শতাংশ এবং তারিকুল ইসলাম ৫ শতাংশ শেয়ার পান। পরবর্তীতে কাজী আমিনুল হক তাঁর স্ত্রী আইরিন পারভিনকে ১০, ছেলে শায়মান সাদিককে ৩৫ এবং ভায়রা শাহ আলমকে ১০ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করেন। কাজী আমিনুল হকের মৃত্যুর পর তাঁর ১৫ শতাংশ শেয়ার অনির্ধারিত অবস্থায় রয়েছে। এ সময় ঢাকার রূপালী ব্যাংক, স্থানীয় কার্যালয় দিলকুশা শাখা থেকে মর্গেজ কৃত ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চা উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়। প্রতিদিন উৎপাদন হতো ২০ থেকে ৩০ হাজার কেজি চা। আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলামের অভিযোগ, হিসাব-নিকাশের গড়মিল তুলে ধরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার সাদাত সম্রাটের রাজনৈতিক শেল্টার নিয়ে বোরহান উদ্দিন তাঁদের কারখানা থেকে জোর করে বের করে দেন। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাজনৈতিক চাপে জোরপূর্বক তাঁদের কাছ থেকে শেয়ার হস্তান্তরের একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও, এখনো বাকি রয়েছে প্রায় ৯৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট কারখানাটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বোরহান উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় কয়েকজন চা ব্যবসায়ীর কাছে তিন বছরের জন্য কারখানাটি লিজ দেন—যা দুই পরিচালককে না জানিয়ে সম্পন্ন করা হয়। আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেকর্ড অনুযায়ী পরিচালক। আমাদের অজ্ঞাতে লিজ চুক্তি, জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় এবং পাওনা অর্থ পরিশোধ না করা—সবই বেআইনি। অথচ এখন আমাদের কারখানায় প্রবেশ পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিচার চাইতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। অন্যদিকে, সব অভিযোগ অস্বীকার করে বোরহান উদ্দিন বলেন, তারা মালিক ছিলেন, তবে আমাদের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করেছেন। কোনো রাজনৈতিক শেল্টার নেওয়া হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুমন চন্দ্র দাশ জানান, এই অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণে চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে চা বোর্ড জানায়, পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান ছুটিতে থাকায় তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি