পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নে জমি যায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্পের কাজ প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করার জন্য এই প্রকল্পের কাজে হাত দেয় একটি বেসরকারী কোম্পানী।
প্রশাসন, কোম্পানী কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে স্থানীয় অধিবাসীরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে কম্পানীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে। এক পক্ষ সরাসরি কম্পানীর পক্ষ নিয়ে পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ করছে অন্যপক্ষ জমিযায়গার বিরোধে পাওয়ার প্লান্ট বন্ধের দাবী তুলেছে।
কোম্পানী কতৃপক্ষ জানায় তেঁতুলিয়া উপজেলার শেখগজ এলাকায় পাথর উত্তোলনের পর পতিত জমিতে ১৫’শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার পরিকল্পনা করে ল্যান্ডকো নামের একটি কোম্পানী। এ জন্য তারা জমি ক্রয় শুরু করে। স্থানীয় জমি বন্দোববস্ত কারীদের মাধ্যমে দুই বছরের মধ্যে প্রায় ২৭৬ একর জমি ক্রয় করেন তারা। পাওয়ার প্লান্টের জন্য যন্ত্রপাতিও স্থাপন শুরু করা হয়। কিন্তু কাগজে কলমে ২৭৬ একর জমি কিনলেও কোম্পানীটি দখলে পায় ৯০ একর জমি। বাকি ১৮৬ একর জমি দখলে নিতে গেলেই স্থানীয়দের সাথে সৃষ্টি হয় বিরোধ। গত ৫ ফ্রেবুয়ারী কোম্পানী কতৃপক্ষ ক্রয়কৃত জমি দখল করতে গেলে স্থানীয় জমির মালিকদের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষের আশংকায় পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা বলছেন কোম্পানী অবিক্রীত আবাদী জমিগুলোর ফসল নষ্ট করে দখল করতে আসে। তাই এই বিরোধের সৃষ্টি। তারা আরও জানান স্থানীয় জমি বন্দোবস্তকারীরা জমি ক্রয়ের সময় কোম্পানী এবং স্থানীয় জমির মালিকদের সাথে প্রতারনা করে জমি ক্রয় বিক্রয় সম্পাদন করেছেন। তারা প্রকৃত জমির মালিকদের কাছে জমি ক্রয় না করে ভুয়া জমির মালিক সাজিয়ে তাদের কাছে জমি ক্রয় করেছেন।
বিরোধীয় জমির প্রকৃত মালিকরা কেউ কেউ জমি বিক্রী করলেও সুবিধা মতো কোম্পানীকে বুঝিয়ে দিতে চায়। কিন্তু কোম্পানী জোর করে তাদের ইচ্ছামতো জমি দখল করছে। ল্যান্ডকো কোম্পানীর স্থানীয় প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম জানান, জোর করে জমি দখলের কথাটি ঠিক নয়। আমরা ২৭৬ একর জমি কিনেছি। কাগজে কলমে তাই আছে। সেই জমি তো আমাদের পেতে হবে। স্থানীয় বিক্রেতারা অনেকে ২ থেকে ৩ বার জমি বিক্রী করে আবার কোম্পানীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোম্পানীর কাছেও জমি বিক্রী করেছেন। অনেকে জাল দলিল, জাল খতিয়ান দেখিয়ে কোম্পানীর কাছে জমি বিক্রীর কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে সেই জমিগুলো চেয়েছি মাত্র। তিনি আরও বলেন কোম্পানীর সাথে নানা ধরণের প্রতারনা করা হয়েছে। যারা জমি বিক্রী করেনননি তাদের সাথে তো আমাদের বিরোধ নেই। বিরোধ তাদের সাথেই যারা জমি বিক্রীর টাকা নিয়ে এখন জমি বুঝে দিচ্ছেনা। মাত্র ৪/৫ জন ব্যাক্তিই এরকম করছেন। তাদের জন্য পাওয়ার প্লান্টের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, কোম্পানীর কাছে আমার পরিবারও জমি বিক্রী করেছে। তারা যতোটুকু কিনেছে আমরা ততটুকু জমি দিয়েছি। এখন আরও কিছু ওয়ারিশান দলিল দেখিয়ে আমাদের তিন ফসলী জমি দখল করতে আসছে। শুধু আমি নয় এরকম অনেক লোকের জমি দখল করতে আসে। বর্তমানে আমরা ভীত সন্ত্রস্থ অবস্থায় আছি। আমরা চাই কোম্পানী আলোচনায় বসুক। প্রয়োজনে বিশ্লেষকের মাধ্যমে জমির কাগজ পর্যালোচনা করুক। তারপরে দখল করুক। বিদ্যুৎ প্লান্ট হোক এটা আমরাও চাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।স্থানীয় অধিবাসী ও কোম্পানী কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। এ ব্যপারে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। আপাতত: এলাকা শান্ত আছে। কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।