পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে তেল চুরির মহোৎসব


পঞ্চগড় প্রতিনিধি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি চুরি ও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও নজরদারির অভাবে হাসপাতাল টির সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সেবায় চলছে তেল চুরির মহোৎসব। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আড়ালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও চালক প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার জ্বালানি চুরি করছেন, যার ফলে সরকার প্রতিবছর গুনছে লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান। অভিযোগ রয়েছে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেম , অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা পেট্রোল পাম্পের যোগসাজশে জ্বালানি ব্যবহার ও ক্রয়ের নামে লাখ লাখ টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। জানা গেছে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে দুটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে একটি টয়োটা মডেলের রেজিস্ট্রেশন কৃত ও অপরটি রেজিস্ট্রেশন বিহীন। পঞ্চগড়ে উন্নত চিকিৎসা না থাকায় প্রতিদিনই একাধিক রোগী রংপুর ও দিনাজপুরে স্থানানন্তর করা হয়।এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চালক একদিকে বাড়তি তেল ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন এসব কাজে সহযোগী হয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার সেই সকল বিল ভাউচারে সাক্ষর করেন। জানা যায়, রংপুর যাতায়াতে প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সে সর্বোচ্চ ২৫ লিটার পেট্রোল বা অকটেনের প্রয়োজন হয়, চালক প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সে রংপুর যাতায়াতে ৫০ লিটার তেল গ্রহণ করেন। প্রতিদিন প্রতিটি এম্বুলেন্স অতিরিক্ত ২৫ লিটার তেল গ্রহণ করেন। দুটি অ্যাম্বুলেন্সে প্রতিদিন ৫০ লিটার তেল অপচয় হয়। যার বাজারমূল্য ৫০০০ টাকার অধিক। এর বাইরেও চালক রোগীর কাছ থেকে বকশিশ, চা খাওয়া ,গাড়ি পরিস্কার খরচের নামে আরো অতিরিক্ত ২০০–৫০০ টাকা আদায় করেন। এছাড়া ফিরতি পথে ৮-১০ করে যাত্রী বহন করে পঞ্চগড় নিয়ে আসেন প্রতিজন যাত্রীর থেকে ৩০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করেন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে হাসপাতালের দুই অ্যাম্বুলেন্সের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা, কিন্তু একই অর্থ বছরে আয় হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বছরজুড়ে লোকসান হয়েছে ২৬ লাখ টাকা, সরকারের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছে দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে। অপচয় না হলে একাধিক এম্বুলেন্স ব্যাবহার করা যেত। একদিকে সাধারণ রোগীরা দুর্ভোগ ও প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি সংশ্লিষ্টরা সরকারের অর্থ অপচয় করছেন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) দোহাই দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়রা বলছেন, এই দুর্নীতির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ওয়াকিবহাল হলেও অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে ২০১৯ সালে আউটসোর্সিং হিসেবে অ্যাম্বুলেন্সে চালক রনি ও সিভিল সার্জন অফিসের গাড়িচালক রফিকুল মিয়া দুটি অ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ১৩ মাস আগেই রনির আউটসোর্সিং পদ টিও বিলুপ্ত হয়, গত ১৩ মাস ধরে সে বিনা বেতনে এম্বুলেন্স চালিয়ে আসছেন, রফিকুল মিয়া সারাদিন সিভিল সার্জন এর গাড়ি চালিয়ে বিকেল থেকে রাত অব্দি এম্বুলেন্স চালিয়ে আসছেন। অ্যাম্বুলেন্সে চালক রনি জানান পঞ্চগড় থেকে রংপুর যাওয়া-আসায় ৫০ লিটার তেল প্রয়োজন হয়। তেল চুরির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমাকে যেভাবে নির্দেশ দেন, আমি সেভাবেই গাড়ি চালাই। তেল কিংবা ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তিনি, সব কিছুই উনার জানা। এসব বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন না করে সরাসরি আরএমও এর সঙ্গে কথা বলাই ভালো। কারণ তেলের ভাউচারে তিনিই স্বাক্ষর করেন। তার স্বাক্ষর ছাড়া আমাকে তেল দেওয়া হয় না। বেতন ছাড়া আপনি কিভাবে চলছেন এই বিষয়ে প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেন নাই। অপর অ্যাম্বুলেন্সে চালক রফিকুল মিয়া বলেন, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এম্বুলেন্স চালানোর কথা স্বীকার করে বলেন এ কাজের জন্য আমি কোনো পারিশ্রমিক পাই না; নিঃস্বার্থভাবে সাধারণ মানুষের সেবা দিচ্ছি। তিনি আরও জানান, রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা নেওয়া হয়, যা গাড়ি ধোয়া ও অন্যান্য খরচ মেটাতে ব্যবহৃত হয়। পঞ্চগড় থেকে রংপুর যাতায়াতকারী বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে চালক মিলন জানান এসি বা নন এসি একটি মাইক্রো রংপুর যাতায়াতের ২৫ লিটারের বেশি তেল প্রয়োজন হয় না, মাইক্রো যেমনই হোক প্রতিলিটারে তেল প্রয়োজন হয় ৯/১০ কিলোমিটার যাতায়াত করা সম্ভব। এরা অ্যাম্বুলেন্সে এ পেট্রোল ব্যবহার করে অকটেনের বিল দেখায়।ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় করে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেম বলেন, আমরা বিআরটিএ’র অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে এক লিটার জ্বালানির জন্য স্লিপ প্রদান করে থাকি। সেই স্লিপ অনুযায়ী ড্রাইভার তেল সংগ্রহ করে গন্তব্যে যান। তেল পাম্পের সঙ্গে ড্রাইভারের যোগসাজশের অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. কাশেম বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য। এমন কোনো অনৈতিক সম্পর্ক নেই। আধুনিক সদর হাসপাতাল পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বিআরটিএ’র অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী অ্যাম্বুলেন্সে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে থাকি। অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে লাভ না হলেও সরকার রোগীদের স্বার্থে এতে ভর্তুকি দেয়।